,

হবিগঞ্জে সম্পাদকদের সাথে পুলিশ সুপারের মত বিনিময় রাজনৈতিক অধিকার হরণ নয়, পুলিশ কাজ করছে নাশকতার বিরুদ্ধেবাংলাদেশে আরও অন্তত ৬ লাখ পুলিশ প্রয়োজন…পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র

মোঃ সেলিম মিয়া তালুকদার ॥ দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র। গতকাল বুধবার বেলা এগারোটা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র বলেন, হবিগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সারাদেশের তুলনায় ভাল। এরপরও যাতে কোন ধরণের নাশকতার ঘটনা না ঘটে পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। তিনি বলেন, রাজনীতিক কর্মকান্ডের নামে জ্বালাও পোড়া, নাশকতা ও সন্ত্রাস মেনে নেয়া যায় না। রাজনৈতিক অধিকার হরণ নয়, নাশকতার বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করছে। হবিগঞ্জে যাতে ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে, নাশকতা ও জ্বালাও পোড়াও এড়াতে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। শুধু পুলিশ দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন- হবিগঞ্জে পুলিশের জনবল কম। ২১ লাখের উপর জনসংখ্যার সেবা দিতে পুলিশ সদস্য রয়েছেন মাত্র ১ হাজার। যেখানে বাংলাদেশে গড়ে প্রতি ১২০০ জনের জন্য একজন পুলিশ রয়েছেন, সেখানে হবিগঞ্জে প্রতি ২১০০ জনের জন্য পুলিশ রয়েছেন মাত্র একজন। পেট্রোল ডিউটি করার জন্য যানবাহন রয়েছে মাত্র ১৬টি। যে কারণে ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও পুলিশের পক্ষে সব সময় ভাল সার্ভিস দেওয়া সম্ভব হয়না। তিনি বলেন- শুধু হবিগঞ্জ নয়, বাংলাদেশে আরও অন্তত ৬ লাখ পুলিশ নিয়োগ দেওয়া দরকার। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ২৫০ জনের জন্য একজন পুলিশ দরকার। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই শহরের ৪ লাখ লোকের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ রয়েছে ১২০০ জন। এ ছাড়াও ২টি ব্যাটালিয়ান হেডকোয়ার্টারে রিজার্ভ পুলিশ রয়েছে ২ হাজার। তিনি বলেন- এদেশে পুলিশের বহুমুখী ব্যবহার করা হয়। পুলিশের দিনও নাই-রাতও নাই। একই ব্যক্তি দিনে ও রাতে ডিউটি করেন। অথচ সমস্কেল বেতনের চাকরিতে কেউ কেউ সপ্তাহে একদিন মাত্র ডিউটি করেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এটা আন্দোলন নয়, রাজনৈতিক মুভম্যান্টে সন্ত্রাসী তৎপরতা। আমরা বাঙ্গালীরা ৭১ এর আগে কোন সময়ই স্বাধীন ছিলাম না। স্বাধীন হয়েই লোকজন মারামারিতে লিপ্ত হতে থাকে। যে কারণে কেউ কেউ চির অশান্তির দেশ হিসেবে এ বাংলাকে মনে করে। শান্তিতে থাকলেই জ্বালা উঠে। রাজনৈতিক কর্মসূচী গণতান্ত্রিক কাজ। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের নামে নাশকতা করলে তা মেনে নেয়া হবে না। তিনি বলেন- বর্তমান পরিস্থিতিতে হবিগঞ্জের কোন নিরীহ লোক হয়রানীর শিকার হবে না। রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার বিষয়ে তিনি বলেন- যেহেতু দলের কর্মসূচীর কারণে বিভিন্ন ধরণের নাশকতার ঘটনা ঘটছে, তাই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ক্ষমতায় যাবেন, কি যাবেন না এ নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। দেশে মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা নেই। নিজের ৮০ বছরের বাবা মারা গেলে আমাদের মাথাব্যথা শুরু হয়। তার অভাব বোধ করি। কিন্তু অন্যের একমাত্র সহায়-সম্বল ছেলে মারা গেলে আমাদের মাথাব্যথা নেই। নাশকতা কারা করছে তা নেতারাই খুঁজে বের করবেন। নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত এলাকার দায়িত্ব নেতাদেরই নিতে হবে। তিনি বলেন- হবিগঞ্জে সাম্প্রতিককালে পরিস্থিতির জন্য পুলিশ তাদের নিয়মিত দায়িত্বের প্রতি মনোযোগী হতে পারছে না। রাজনীতির নামে সন্ত্রাস না করলে পুলিশ অন্যদিকে মনোযোগী হতে পারতো। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পুলিশ ডাকাত তাড়ানোর সময় পাবে না। তিনি ভারতের দিল্লীর নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে বলেন- আমাদের দেশে নিজের ছেলে-বাপ মরলে সমস্যা নেই, নেতা মরলেই সমস্যা। এ দেশে মার্কা নিয়ে মানুষের যত মাথাব্যথা। আর দিল্লীতে আমআদমি পার্টিকে জয়ী করে জনগণ প্রমাণ করেছে জনগণের ক্ষমতার জোর। তিনি পুলিশ বিভাগের ছোটখাট অনিয়মের বিষয়ে বলেন- পুলিশ বিভাগে কাজের স্বচ্ছতা চাই। তবে সবাই সমান নন, ঘরের ২ ভাইও এক রকম হয় না। হবিগঞ্জের এক হাজার পুলিশকে একেবারে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবে, কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি সম্পাদকদের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন- আপনারা লেখনীর মাধ্যমে জনমত গঠন করতে পারেন। কাজের সঙ্গে যেন রাজনীতির সম্পর্ক না থাকে। তাহলেই পুলিশের সঙ্গে সাংবাদিকদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। তিনি বলেন- আমার ১৬ বছরের চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ সার্ভিস দেয়ার চেষ্টা করেছি। জান-মালের নিরাপত্তার যেন বিঘœ না ঘটে। ছাত্রজীবনে আমরা পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেছি। কিন্তু দল-মত এর বাইরে সম্মানের জায়গাটুকু ধরে রেখেছি। তিনি বলেন- আমরা গুলি করে বিএনপি-জামাত নেতাদের মারতে চাই না। প্রত্যেকের নিজস্ব জগত আছে। পুলিশের কারণে বাজে পরিস্থিতি তৈরী হোক, তা চাই না। সভায় তিনি জানান- আগামী ১৯ ফেব্র“য়ারি হবিগঞ্জ পুলিশ বিভাগে ১৪১ জন নতুন পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে, এই নিয়োগ নিয়ে যাতে কেউ বাণিজ্য না করতে পারে সে ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি জানান- পুলিশের এ নিয়োগ কোন প্রার্থী যাতে কারও কাছে কোন টাকা পয়সা না দেন। আর কেউ কারও কাছ থেকে টাকা নেয়ার চেষ্টা করলে তা যেন তাকে (পুলিশ সুপারকে) অবহিত করা হয়। সভায় সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) মাসুদুর রহমান মনির তথ্য বিভ্রান্তি এড়াতে শোনা কথার উপর ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশ না করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন- পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পুলিশ ও সাংবাদিক মিলে দেশ মাতৃকার উন্নয়নে কাজ করবো। সভায় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (উত্তর) সাজ্জাদুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) সাজ্জাদ ইবনে রায়হান, দৈনিক খোয়াই সম্পাদক শামীম আহছান, স্বদেশবার্তা সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, হবিগঞ্জ সমাচার সম্পাদক গোলাম মোস্তফা রফিক, প্রতিদিনের বাণী সম্পাদক শাবান মিয়া, হবিগঞ্জের জনতার এক্সপ্রেস সম্পাদক ফজলুর রহমান, তরফ বার্তা সম্পাদক ফারুক উদ্দিন, দৈনিক দেশজমিন সম্পাদক আলমগীর খান, হবিগঞ্জের আয়না সম্পাদক রাশেদ খান, বিবিয়ানা সম্পাদক ফখরুল ইসলাম চৌধুরী, সাপ্তাহিক হবিগঞ্জের খবর সম্পাদক হুমায়ূন কবির, জনতার দলিল আশরাফ উদ্দিন মামুন, দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রাসেল চৌধুরী, বিজয়ের প্রতিধ্বনির যুগ্ম সম্পাদক জিয়া উদ্দিন দুলাল, আজকের হবিগঞ্জের বার্তা বিভাগ ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম কোহিনুর ও হবিগঞ্জ সময়’র প্রকাশক ও বার্তা সম্পাদক মোঃ সেলিম মিয়া তালুকদার।


     এই বিভাগের আরো খবর